অস্ত্রোপচারের নানা যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান

ভাবুন তো, অপারেশন থিয়েটারে কোনো যন্ত্রপাতিই নেই। তাহলে কী শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর করবেন নাকি চোখের সামনে প্রিয়জনকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখবেন? এভাবে নিশ্চয়ই আমরা ভাবতে পারি না, অবশ্য ভাবার দরকারও নেই। জীবন বাঁচাতে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতির মতো অপরিহার্য উদ্ভাবন হয়েছে দশম শতকেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন করেছেন মুসলিম শল্যচিকিৎসক।

অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দশম শতাব্দীর মুসলিম সার্জন আল-জাওয়াহিরি আধুনিক যুগে ব্যবহৃত হয় এমন অনেক যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তাঁর আবিষ্কৃত সুই, রেজারসহ অন্তত দুই শ যন্ত্রের গুরুত্ব আধুনিককালের সার্জনরা স্বীকৃতি দিয়েছেন। তা ছাড়া ক্ষতস্থান সেলাইয়ের জন্য তিনি এক প্রকার থ্রেড বা সুতা তৈরি করেন, যা সেলাইয়ের পরে আস্তে আস্তে শরীর থেকে একা একাই পৃথক হয়ে যায়। ক্যাপসুলের আবিষ্কারকও আল-জাওয়াহিরি।

সোনালি যুগে শল্যচিকিৎসাবিদ আবুল কাসিম আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩) পৃথিবীকে উপহার দেন তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘আত-তাসরিফ’। শল্যচিকিৎসায় আল-জাহরাভি কেমন পারদর্শী ও অভিজ্ঞ ছিলেন গ্রন্থটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তার রচিত ৩০ খন্ডের বিশ্বকোষ ‘আল-তাদরিফ’-এর একটি খন্ড লিখেছেন ‘অস্ত্রোপচার’ নামে। তাকে স্বর্ণযুগের মুসলিম বিশ্বের মহৎ শল্যবিদ ও আধুনিক শল্যচিকিৎসার জনক বলে গণ্য করা হয়। তার অবদান আধুনিক চিকিৎসায়ও প্রভাব ফেলেছে। আবুল কাসিম আল-জাহরাভি কর্ডোভার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষা শেষে জাহরায় চিকিৎসাসেবা শুরু করেন।

ত্রয়োদশ শতাব্দীর অপর মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে নাফিস রক্তসঞ্চালনের বিষয়টি সবার আগে সামনে নিয়ে আসেন। তাঁর সময়কার মুসলিম চিকিৎসকরা আফিম ও অ্যালকোহলের সংমিশ্রণে এমন এক সুই উদ্ভাবন করেন, যা দিয়ে যে কাউকে বেহুঁশ ও অচেতন করা যেত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এই পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।

সূত্র:
দেশ রূপান্তর
কালেরকন্ঠ
Al-Tasrif

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Main Menu